শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন
আলিমুন খান, মণিরামপুর,যশোর ,কালের খবর :
শিশু শিক্ষার্থী তারিফ হোসেন (৯) হত্যাকান্ডের পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও আতংঙ্ক কাটেনি ফেদাইপুর গ্রামের নারী-পুরুষের মাঝ থেকে। একদিকে শোক, অন্যদিকে আতংঙ্ক নিয়ে গ্রামটিতে যেন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। ঘাতক বিল্লাল কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ঘাতকের মা এ মামলার আসামী মরিয়ম শনিবার গ্রেফতার হয়েছে, বাবা পলাতক কাঠো মোস্তফা এখনো পলাতক রয়েছে। তারপরও সাধারণ মানুষ ওদের নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
সোমবার (১৪ জানুয়ারী) বিকেলে সরেজমিন ফেদাইপুর গেলে কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে। কেউ মুখ খুলতে চায় না তারিফ হত্যাকান্ড নিয়ে, কোন কথা বলতে চায় না কেউ, সবার মাঝে বিরাজ করছে শোক এবং আতংঙ্ক। শিশু তারিফকে হত্যা করা হয় মাছ চুরির ঘটনা নিয়ে।
তারিফের ফুফু নিপা খাতুন জানায়, প্রায় তাদের পুকুর থেকে মাছ চুরি করে ধরতো ঘাতক বিল্লাল হোসেন ও তার মা-বাবা। এ নিয়ে তারিফের চোখে পড়ে কয়েকদিন। তারিফ মাছ চুরির ঘটনা তার বাবা সিদ্দিকুর রহমানকে জানাতো। এ নিয়ে তারিফের প্রতি ক্ষুদ্ধ ছিলো বিল্লাল ও তার মা-বাবা। ফুফু নিপা জানায়, তারিফ অপহরনের দিন বিকেলে স্কুল ছুটির পর বাড়ীতে আসে। ঘর থেকে হাতে করে একটি বল ও ব্যাট নিয়ে খেলার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়। মা রোজিনা বেগমকে জানায় আপনি খেচুড়ি রান্না করতে লাগেন আমি খেলা করে খাবো। এরপর আর খেচুড়ি খেতে আসেনি তারিফ।
তারিফের বাবা সিদ্দিক গাজীর বাড়ী থেকে ঘাতক বিল্লালের বাড়ীর দূরত্ব হবে ২’শ গজের মতো। এরই মধ্যে তারিফ নিখোঁজ। প্রতিবেশী শাহিনুর রহমান জানায়, ঘাতক বিল্লাল পুলিশের হাতে আটকের পর তারিফকে অপহরণ এবং তাকে হত্যার ঘটনা স্বীকারোক্তি দেয়। বিল্লাল সু-কৌশলে তারিফকে ডেকে বিল্লালের বাড়ীতে তোলে। ঘরের মধ্যে নিয়ে ঘুমের ঔষুধ মিশ্রিত জুস খাওয়ায় তারিফকে।
এরপর তারিফ কে রাখা হয় ওই ঘরেই। পরে তাকে ওই ঘরের মধ্যেই হত্যা করা হয়। ঘটনার সময়ই বিল্লালের মা মরিয়ম এবং বাবা মোস্তফা বাড়ীতে থাকে। বিল্লাল পুলিশের হাতে আটকের পর অপহরণ ও হত্যা কান্ডের এমন তথ্য জানায় পুলিশকে। জেএসসি পরীক্ষায় ফেল করা একজন কিশোর বিল্লাল তারিফকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনা বর্ণনাতেই যেন সিনেমাকে হার মাননোর মতো।
শিশু তারিফের ফুফু নিপা খাতুন আরো জানায়, অপহরণের পর সন্ধ্যার দিকে তারিফের মা রোজিনা খাতুন সন্তানকে খুজতে বিল্লালের বাড়ীতে যায়। এ সময় তার ঘরের মধ্যে শব্দ করেই সাউন্ড বাজাচ্ছিলো বিল্লাল। রোজিনা খাতুন এ সময় বিল্লালের বাড়ীর ওঠানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ঘর থেকে এ সময় বিল্লাল বেরিয়ে এসে রোজিনার মাথায় তেল পানি দিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছিলো। তারিফের পরিবার দাবী করে জানায়, তৎক্ষণে শিশু ছাত্র তারিফ অপহরনকারী বিল্লালের ওই ঘরের মধ্যেই লুকিয়ে রাখাছিলো।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গ্রামের ক্ষুদ্ধ জনতা ঘাতক বিল্লালের বাড়ী-ঘর অগ্নিসংযোগে পুড়িয়ে দেওয়ার পর বিল্লালের ঘর থেকে রক্তমাখা বিভিন্ন কাপড়-চোপড় এবং মাটির একটি গর্তে প্রচুর রক্ত দেখতে পায়। এলাকাবাসীর ধারণা ঘাতক বিল্লাল শিশু তারিফকে অপহরণের পর ঘরের মধ্যেই হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুম করতে ছিলিমপুর মাঠে কালভার্টের নিচে রাখা হয়।
এ ঘটনায় তারিফের চাচা শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। এ মামলায় আসামী করা হয় বন্দুকযুদ্ধে নিহত তারিফের ঘাতক বিল্লাল, তার বাবা কাঠো মোস্তফা ও মা মরিয়মসহ অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে। পুলিশ গত শনিবার এই গ্রামের একটি বাড়ী থেকে মরিয়মকে গ্রেফতার করেছে।
মামলার অন্যান্যে আসামীদের আটকের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন। এদিকে, গত শনিবার ঘাতক বিল্লালের লাশ দাফন করা হয়েছে তার গ্রামে। তার মরদেহ আসার পর প্রতিবেশীদের কয়েকজন কবর খুড়ে লাশ দাফনের কাজ সম্পন্ন করে।
উল্লেখ্য, গত ৬ জানুয়ারী বিকেলে নিখোঁজ হয় তারিফ হোসেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ছিলুমপুর মাঠের একটি কালভার্টের নিচ থেকে শিশু তারিফ হোসেনের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে মণিরামপুর পুলিশ। এদিন বিকেল চারটায় ঘাতক বিল্লালকে পুলিশ কেশবপুর বাজারের একটি বিকাশের দোকান থেকে গ্রেফতার করে। এ দিন গভীর রাতে সে দূর্বৃত্তদের গুলিতে মারা যায়।
সোমবার (১৪ জানুয়ারী) শিশু তারিফের বাড়ীতে গেলে চোখে পড়ে স্বজনদের ভীড়। সবার চোখে-মুখে ছলছল করছে পানি। তারিফের বাবা সিদ্দিক গাজী জানায়, আমার বাচ্চা তারিফকে হত্যা করায় আল্লাহ তাৎক্ষনিক বিচার করেছে। আশা করবো ঘটনার সাথে অন্য আরো যারা জড়িত আছে পুলিশ যেন তাদের সকলকে গ্রেফতার করে সু-বিচারে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।